• রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১
  • ||

ইউটিউব দেখে বরই চাষে সফল আবদুল করিম 

প্রকাশ:  ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৩১ | আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৪৭
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি

জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ ইউটিউবে কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের অনুপ্রেরণামূলক প্রতিবেদন দেখে বরই চাষে সফল হয়েছেন লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার কৃষক আবদুল করিম। জানা গেছে, চারা রোপণের ১১ মাসেই তার বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় ৫০ হাজার টাকার বরই বিক্রিও করেছেন। তাকে বরই চাষে উদ্বুদ্ধ করেন জামাল উদ্দিন নামের এক গ্রাম্যচিকিৎসক।

আবদুল করিম উপজেলার লাহারকান্দি ইউনিয়নের শহীদপুর গ্রামের মৃত রুহুল আমিনের ছেলে। তার সংসারে স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে।

জানা যায়, গত ফাল্গুনে উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের সূতার গোপটার ইজতেমা মাঠ এলাকা ৬৬ শতাংশ জমিতে বরই গাছের চারা রোপণ করেন আবদুল করিম। খুলনা থেকে তিনি কুরিয়ার যোগে চারাগাছগুলো ক্রয় করে আনেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাকে চাষাবাদে সহযোগিতা করেছেন।

তার বাগানে প্রতিদিন ৫০০ টাকা হারে ৩ জন শ্রমিক কাজ করেন। মাঝে মাঝে ২ জন নারী শ্রমিককেও নিয়োগ দেওয়া হয়। বার্ষিক চুক্তিতে জমিটি লিজ নেওয়া হয়েছে। বাগানটিতে কাশ্মিরী ও বল সুন্দরী বরই উৎপাদন করা হয়েছে। গাছ থেকেই পাকা বরই সংগ্রহ করে বিক্রি করা হয়। এতে বরইগুলোর স্বাদও বেশি হচ্ছে।

আবদুল করিম বলেন, ১৫ বছর ধরে আমি কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। মৌসুম ভেদে সবজি চাষই আমার একমাত্র কাজ ছিলো। এবারো টমেটো চাষ করেছি। টমেটোতে লাভবান হয়েছি। কিন্তু এর আগে বিভিন্ন সবজি চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এতে জামাল উদ্দিন নামে এক গ্রাম্যচিকিৎসক আমাকে বরই চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। ইউটিউব দেখে বরই চাষের ব্যাপারে দিক নির্দেশনামূলক তথ্য জানতে বলেন তিনি।

তিনি বলেন, জামাল উদ্দিনের কথামতো আমি ইউটিউবে শাইখ সিরাজের বিভিন্ন প্রতিবেদন দেখা শুরু করি। শাইখ সিরাজের প্রতিবেদনগুলো দেখেই আমি জমি তৈরি করি। গেলো ফাল্গুনের ২০ তারিখে ১ ফুট আকারের বরই চারা পুরো জমিতে রোপণ করি। ৯ মাসের মাথায় বরইগাছগুলোতে ভালো ফলন হয়েছে। গাছ থেকে পাকা বরই সংগ্রহ করেই স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। অনেকেই বাগানে এসে বরই কিনে নিয়ে যান। এখন আমার এক একটি বরই গাছ ১০-১২ ফুট লম্বা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল খালেক বলেন, আমাদের ভবানীগঞ্জ সবজি চাষে পুরো জেলাতেই সুনাম রয়েছে। এখানে যে বরই চাষ হবে তা কেউই কখনো কল্পনা করেনি। আবদুল করিমের বরই বাগানে ভালোই উৎপাদন হয়েছে। আশা করি, এ বছরই তিনি তার খরচ উঠাতে পারবেন।

বরই কিনতে যাওয়া চাকরিজীবী মো. হাসান মাহমুদ বলেন, এ ধরনের একক বরই বাগান লক্ষ্মীপুরে আর কোথাও নজরে পড়েনি। বরইগুলোও দারুণ মিষ্টি। ঝুঁকি নিয়েই আবদুল করিম বরই বাগানে সফলতা দেখছেন। তার মতো অন্যরাও যদি ঝুঁকি নেয় তাহলে মেঘনা উপকূলীয় এ অঞ্চল কৃষিক্ষেত্রে আরো এগিয়ে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে প্রায় ৯৬ হেক্টর জমিতে বরই চাষ হয়। এতে সাড়ে ৯০০ টন বরই উৎপাদন হয়। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ৫-৬ হেক্টর জমিতে বরই চাষ করা হয়। তবে অল্প সময়ে পর্যাপ্ত বরই উৎপাদন হয় বাগানগুলোতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, আবদুল করিম প্রায় ১১ মাস আগে বরই চাষ শুরু করেন। তার বাগানে পর্যাপ্ত বরই উৎপাদন হয়েছে। তিনি এ বাগান থেকে ৬-৭ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে আমরা আশবাদী। আরো ২-৩টি বাগান রয়েছে। কৃষকরা এখন ফল চাষে এগিয়ে আসছেন।

তিনি আরো বলেন, এ জেলায় কাশ্মিরী, বাউল ও বল সুন্দরী বরই উৎপাদন হয়। কীভাবে চারা উৎপাদন করে তা সম্প্রসারণ করতে হয় সে ব্যাপারে আমরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়ার জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজ করছেন। বরই চাষে প্রচুর খরচ রয়েছে। যাদের অর্থের সমস্যা আছে, তাদেরকে ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো বলেছি।

পূর্বপশ্চিম/এএন/অ-ভি

লক্ষীপুর,বরই,চাষী,সফল

সারাদেশ

অনুসন্ধান করুন
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত
close